ঢাকা, বুধবার   ০২ জুলাই ২০২৫

দিল্লির হাসপাতালে অক্সিজেন বিপর্যয় 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৫, ২৪ এপ্রিল ২০২১

Ekushey Television Ltd.

ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ২০ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি বাংলা।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাতে ২০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে মারা গেছেন।

জয়পুর গোল্ডেন নামের ওই হাসপাতালের পরিচালকের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়া অধিকাংশ রোগীই করোনা আক্রান্ত ছিলেন। প্রত্যেকেই অক্সিজেনের চাপ কমে যাওয়ার কারণে মারা যান। সে সময় হাসপাতালের অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে যায়।

ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. দীপ বালুজার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হাসপাতালে থাকা ২শ’ রোগীর মধ্যে ৮০ জন অক্সিজেন সাপোর্টে এবং ৩৫ জন আইসিইউতে রয়েছেন।

হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টার মধ্যে হাসপাতালের তরল অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে যায়। এরপর আমরা কেন্দ্রীয় গ্যাস পাইপ লাইনের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংযোগ করে দিলেও, অক্সিজেনের চাপ কম থাকায় রোগীরা মারা যান।’

শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে হাসপাতালটিতে মাত্র ৪৫ মিনিটের মতো অক্সিজেনের যোগান ছিল বলে দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই হাসপাতালটির অক্সিজেনের যোগান পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মধ্যরাত পর্যন্তও তারা নির্ধারিত অক্সিজেন পায়নি। এমনকি ২০ জন রোগীর মৃত্যুর পরও হাসপাতালটি প্রয়োজনের মাত্র ৪০ ভাগ অক্সিজেন পেয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. বালুজা আরও বলেন, ‘আমরা আবারও সংকটময় পরিস্থিতিতে। ২শ’ জনের জীবন এখন ঝুঁকিতে। গত রাতে আমরা অধিকাংশ রোগীকে বাঁচাতে পারলেও আজ তা পারবো না। আমাদের অক্সিজেনের জরুরি মজুদও শেষ হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে অক্সিজেন মজুত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ২৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এর আগে ২১ এপ্রিল মহারাষ্ট্রের নাসিক শহরের একটি সরকারি কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে একসঙ্গে অন্তত ২২ জন রোগী মারা যান।

ওই হাসপাতালের সামনে একটি ট্যাঙ্কার থেকে অক্সিজেন লিক হওয়ার কারণেই ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় আধা ঘণ্টার মত হাসপাতালের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ ছিল, যার ফলে ২২ জন রোগী প্রাণ হারান। সেদিন সেখানে অন্তত দেড়শ’ রোগী ভর্তি ছিলেন, যাদের হয় ভেন্টিলেটরে রেখে বা চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে চিকিৎসা চলছিল।

অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে, যখন একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিশ্বে রেকর্ড করেছে ভারত। বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ৪৬ হাজারেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত তিন দিনে দেশটিতে প্রায় দশ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ভারতের কিছু কিছু এলাকার স্বাস্থ্য সেবা খাত তাদের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলো চরমভাবে অক্সিজেন সংকটে ভুগছে। অক্সিজেনের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও হৃদয়বিদারক করে তুলেছে। দেশটির বহু হাসপাতালই অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে।

উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে রোগীর স্বজনরা সারা রাত ধরে লাইন দিচ্ছেন অক্সিজেন কেনার জন্য। একেকটা সিলিন্ডারের দাম ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু সেটাও এখন পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন।

ওই উত্তরপ্রদেশেরই একজন সিনিয়ার সাংবাদিকের কথা জানা গেছে, যিনি একের পর এক টুইট করে আবেদন করছিলেন অক্সিজেনের চেয়ে, লিখছিলেন যে তার অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে আসছে। তিনি শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন পাননি, মৃত্যু হয়েছে তার।

তবে পূর্ব ভারতে অক্সিজেনের ঘাটতি এখনও দেখা দেয়নি। যেহেতু মূলত এই অঞ্চলটিতে ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলো অবস্থিত, ওই কারখানাগুলোতেই শিল্পের জন্য অক্সিজেন মজুত থাকে। তাই এই অঞ্চলে অক্সিজেন যেতে শুরু করেছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। তবে এই কাজটা আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরবরাহ বাড়াতে অতিরিক্ত ট্রেন মোতায়েন করেছে সরকার। সেই সঙ্গে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিমান বাহিনীকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। খবর পাওয়া গেছে, জার্মানি থেকেও অক্সিজেন আনার চেষ্টা করছে ভারত।

এদিকে অক্সিজেন সংকটের কারণে ভারত সরকারকে তিরস্কার করেছেন দিল্লি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

এএইচ/এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি